বিষয়বস্তুতে চলুন

হুররাম সুলতান

উইকিপিডিয়া, মুক্ত বিশ্বকোষ থেকে
  • হুররাম সুলতান
  • Hürrem Sultan
  • خُرَّم سلطان
a
  • মেরিয়েম-হিল্কাত
  • আসিয়ে-'ইফফেত
  • হাতিসে-হুরমেত
  • ফাতিমা-'ইস্মেত
  • ওয়ালিদে-ই সা'ঈদে
  • মেহদ-ই উলেয়া-ই সুলতানাত
তিতিয়ান কর্তৃক অঙ্কিত La Sultana Rossa নামক চিত্রকর্ম, ১৫৫০ খ্রিস্টাব্দ
উসমানীয় সাম্রাজ্যের হাসেকি সুলতান
কার্যকাল১৯ মার্চ ১৫৩৪ – ১৫ এপ্রিল ১৫৫৮
পূর্বসূরিকেউ না, নতুন উপাধি
উত্তরসূরিনুরবানু সুলতান
জন্মআনু. 27 অক্টোবর১৫০২
রোহাটিন, পোল্যান্ড রাজ্য (বর্তমানে ইউক্রেনের অধীনস্থ এলাকা)
মৃত্যু১৫ এপ্রিল ১৫৫৮ (বয়স-৫৬)
তোপকাপি প্রাসাদ, কনস্টান্টিনোপল, উসমানীয় সাম্রাজ্য
সমাধি
দাম্পত্য সঙ্গীপ্রথম সুলাইমান
বংশধর
পিতাহাভ্রাইলো লিসভস্কি[][]
মাতালেকজান্দ্রা লিসভস্কি
ধর্মইসলাম, পূর্বে অর্থোডক্স খ্রিস্টান

হুররাম সুলতান ( তুর্কি উচ্চারণ: [hyɾˈɾem suɫˈtaːn] ; উসমানীয় তুর্কি: خُرَّم سلطان; আধুনিক তুর্কি: Hürrem Sultan; আনু. ২৭ অক্টোবর ১৫০২–১৫ এপ্রিল ১৫৫৮) যিনি রোজেলানা হিসেবেও পরিচিত–[note ১] ছিলেন উসমানীয় সম্রাট প্রথম সুলাইমানের কানিজ (উপপত্নী) এবং পরবর্তীকালে তার বৈধ স্ত্রী। তিনি সম্রাটের সন্তান সুলতান দ্বিতীয় সেলিম, শাহজাদা মেহমেদ, মিহরিমাহ সুলতান, শাহজাদা আব্দুল্লাহ, শাহজাদা বায়েজিদ ও শাহজাদা জাহাঙ্গীরের মাতা। [] উসমানীয় ইতিহাসের সবচেয়ে প্রভাবশালী ও ক্ষমতাধর নারীদের মধ্যে তিনি একজন ছিলেন। নারীদের সালতানাত নামে পরিচিত শাসনকালের তিনি একজন অন্যতম ব্যক্তিত্ব।

হুররাম সুলতানের হাত ধরেই উসমানী সাম্রাজ্যে প্রথম নারীদের ক্ষমতা বৃদ্ধি পায় । তাঁর স্বামীর শাসনকালে তিনি সুলতানের প্রধান স্ত্রী (হাসেকি সুলতান) ছিলেন। তিনি তার স্বামীর মাধ্যমে ক্ষমতা অর্জন করে উসমানী সাম্রাজ্যের রাজনীতিতে প্রভাব বিস্তার করে সাম্রাজ্যের রাষ্ট্রীয় কর্মকাণ্ডে সক্রিয় ভূমিকা রাখেন।[]

কিছু ঐতিহাসিকের মতে, জন্মসূত্রে রোক্সেলানার আসল নাম ছিল আলেকজান্দ্রা রুসলানা লিসোভস্কা, বা আনাস্তাসিয়া লিসোভস্কা, ডাকনাম ছিল অটোম্যানদের মধ্যে, তিনি প্রধানত হাসেকি হুররাম সুলতান বা হুররাম হাসেকি সুলতান হিসেবে পরিচিত ছিলেন; পাশাপাশি আরও পরিচিত ছিলেন রোক্সেলানা, রোক্সোলানা, রোক্সেলানে, রোসসা ও রুজিকা নামে; তুর্কি ভাষায় হুররাম( ফার্সি: خرم ভাষায় খুররাম, "সদা প্রফুল্ল"); এবং আরবিতে করিমা (আরবি: كريمة, "অভিজাত")। "রোক্সেলানা" সম্ভবত তার মূল নাম নয় বরং তার ডাকনাম ছিল, যা তার রুসাইন বংশসূত্রকে নির্দেশ করত (সে সময়ের প্রচলিত নাম "রুস্লানা"র সাথে তুলনা করে ); প্রাচীন রোক্সোলানির নামানুসারে "রোক্সেলোনি" বা "রোক্সেলানি" ১৫শ শতাব্দী পর্যন্ত ইউক্রেনীয়দের মাঝে একটি অন্যতম প্রচলিত নাম ছিল। সুতরাং তার ডাকনামের শাব্দিক অর্থ হল "রুথেনিয়ার ব্যক্তি"।[]

প্রাথমিক জীবন

[সম্পাদনা]

আধুনিক তথ্যলিপিসমুহে হুররাম সুলতানের প্রাথমিক জীবন সম্পর্কে তেমন কোন নির্ভর যোগ্য তথ্য পাওয়া যায় না, এ সকল তথ্যভাণ্ডার হুররাম সুলতানের রুসাইন ও ইউক্রেনীয় জাতিত্ব অথবা তার জন্মস্থান হিসেবে পোল্যান্ড রাজ্যকে উল্লেখ করার মধ্যেই সীমাবদ্ধ। ১৬শ শতাব্দীর মাঝামাঝি, ক্রিমীয় খানাতে লিথুনিয়ার রাজ ডিউক জমিদারির প্রতিনিধি মিখালন লিটভাইন তার ১৫৪৮-১৫৫১ সালের রচনা "এবাউট কাস্টমস অফ তাতারস, লিথুনিয়ান্স এন্ড মস্কো" (লাতিন: De moribus tartarorum, lituanorum et moscorum)-য় বাণিজ্য বিষয়ক বর্ণনার মাঝে উল্লেখ করেন যে, "[...] বর্তমান তুর্কি সম্রাটের সবচেয়ে প্রিয়তম স্ত্রী - তার ভবিষ্যৎ পুত্রের মাতা যে তার পরবর্তীকালে শাসন করবেন, তিনি আমাদের ভূমি থেকে অপহৃত হয়েছেন"।[]

১৬শ-শতাব্দীর পরবর্তী এবং ১৭শ- শতাব্দীর শুরুর দিকে তুর্কি বিষয়ে গবেষক পোলিশ কবি সামুয়েল ত্বারদভস্কির দেয়া তথ্য অনুসারে, হুররেম সম্ভবত কোন ইউক্রেনীয় অর্থোডক্স ধর্মযাজক পিতার ঘরে জন্ম নিয়েছিলেন।[১০][১১][১২] তিনি পোল্যান্ড রাজ্যের রুথেনীয় ভয়ভডেশিপের প্রধান শহর ল্বও-এর ৬৮ কিলোমিটার দক্ষিণপূর্বের রুহাটাইন নগরীতে জন্মগ্রহণ করেন (বর্তমান পশ্চিম ইউক্রেন)।[১২] ১৫২০-এর দশকে ক্রিমিয়ার তাতাররা ওই এলাকার একটি তড়িৎ অভিযানের সময় তাকে বন্দী করে একজন দাসী হিসেবে নিয়ে আসে (সম্ভবত প্রথমে ক্রিমিয়ার নগরী কাফফায়, যা দাস ব্যবসার একটি প্রধান কেন্দ্র, এরপর কনস্টান্টিনোপলে) এবং তাকে প্রথম সুলাইমানের হারেমের জন্য বাছাই করে।[১০][১২]

সুলেমানের সঙ্গে সম্পর্ক

[সম্পাদনা]

অল্প সময়ের মধ্যেই রোক্সেলেনা তার মুনিব সুলায়মানের সুনজরে চলে আসেন এবং সমসাময়িক প্রতিদ্বন্দ্বীদের ঈর্ষার পাত্রীতে পরিণত হন। শীঘ্রই তিনি সুলায়মানের প্রিয়তম সঙ্গিনী বা হাসেকি সুলতান হয়ে ওঠেন। সুলতানের উপর হুররামের প্রভাবের কথা দ্রুত আশেপাশের সব জায়গায় ছড়িয়ে পড়ে। তিনিই সুলতানের সর্বাধিক সংখ্যক সন্তানের জন্ম দেন, এবং আশ্চর্যজনকভাবে চিরায়ত প্রথা ভঙ্গ করে - তিনি দাসত্ব হতেও মুক্তি লাভ করেন। দুইশত বছরের অটোম্যান ঐতিহ্যকে ভঙ্গ করে,[১৩] একজন প্রাক্তন উপপত্নী এভাবে অবশেষে সুলতানের বৈধ পত্নী হয়ে ওঠে, যা প্রাসাদ ও নগরীর প্রত্যক্ষদর্শীদের জন্য অত্যন্ত হতবাককারী একটি বিষয় ছিল।[১৪] এই ঘটনা সুলাইমানকে ওরহান গাজির (১৩২৬- ১৩৬২) পর প্রথম কানিজ বিবাহকারী সুলতানের পরিচয় এনে দেয় এবং প্রাসাদে হুররামের অবস্থানকে আরও শক্তিশালী করে, যার ফলশ্রুতিতে তার অন্যতম পুত্র দ্বিতীয় সেলিম ১৫৬৬ সালে সাম্রাজ্যের উত্তরাধিকার লাভ করেন।

১৫৪৯ সালে সিগিস্মন্ড দ্বিতীয় অগাস্টাসকে পোল্যান্ডের সিংহাসনে আরোহণ করায় অভিনন্দন জানিয়ে লেখা হুররেম সুলতানের পত্র।

ইস্তাম্বুলের হেরেমে হুররেম সুলতান সুলায়মানের প্রথম খাসবাদীর(উপপত্নী) , মাহিদেভরান সুলতানের একজন শক্তিশালী প্রতিদ্বন্দ্বী হয়ে ওঠেন। ১৫২১ সালে হুররাম তার প্রথম পুত্র মেহমেদের জন্ম দেন এবং এরপর আরও চার পুত্র, যা সুলতানের একমাত্র পুত্রের মাতা হিসেবে অর্জিত মাহিদেভরানের মর্যাদাকে ক্ষুণ্ণ করে দেয়।[১৫] সুলায়মানের মাতা, আয়শে হাফসা সুলতান, হারেমের শৃঙখলা বজায় রাখতে এই দুই মহিলার শত্রুতাকে অংশত গোপন রাখতেন। কিন্তু ১৫৩৪ সালে তার মৃত্যুর পর, একটি তুমুল লড়াই সঙ্ঘটিত হয়, যেখানে মাহিদেভরান হুররেমকে মারধর করেন। এ ঘটনায় সুলাইমান ক্ষুব্ধ হয়ে পরবর্তীতে মাহিদেভ্রান সুলতানকে পুত্র শাহজাদা মুস্তাফা সহ প্রাদেশিক রাজধানী মানিসায় পাঠিয়ে দেন। অপরপক্ষে তুর্কি ইতিহাসবিদ নেচদেত সাকাওলুর মত অনুসারে, এই অভিযোগগুলি মোটেও সত্য ছিল না। উসমানীয় প্রথানুযায়ী রাজনৈতিকভাবে সাম্রাজ্য পরিচালনার অভিজ্ঞতা লাভের জন্য শাহজাদা মুস্তাফা মানিসা প্রদেশের গভর্নর নিযুক্ত হওয়ার কারণে মাহিদেবরান তার পুত্র মুস্তাফাসহ ইস্তাম্বুল ছেড়ে মানিসা গিয়েছিলেন।[১৬]

হুররাম এবং মাহিদেভরান মিলে সুলাইমানের ছয় পুত্রসন্তানের জন্ম দেন, যাদের মধ্যে ৪ জন ১৫৫০ সালের মধ্যে জীবিত ছিল: মুস্তফা, সেলিম, বায়েজিদ, ও জাহাঙ্গীর। এদের মাঝে, মাহীদেভ্রানের পুত্র মুস্তাফা বয়োজ্যেষ্ঠ উত্তরাধিকারী হিসেবে হুররেমের সন্তানদের অগ্রবর্তী ছিলেন। হুররেম মনে যে নিয়মানুসারে মুস্তাফাই সুলতান হবে, এবং প্রথা অনুযায়ী মুস্তাফা হুররেমের নিজ সন্তানদের শ্বাসরোধ করে হত্যা করতে পারে, যদিও শাহজাদা মুস্তাফা তার ভাই-বোনদের যথেষ্ট পরিমাণে ভালোবাসতেন। তথাপি মুস্তফাও সকল ভাইয়ের মধ্যে সবচেয়ে বিচক্ষণ বলে অনেকেই তাকে প্রাধান্য দিত এবং পারগালি ইব্রাহীম পাশাও তাকে সমর্থন করতেন, যিনি ১৫২৩ সালে সুলতানের প্রধান উজির হন। অনেক তথ্যসূত্রে [কোনটি?] ইঙ্গিত করা হয়েছে যে, ইব্রাহিম পাশা হুররেম সুলতানের চক্রান্ত ও প্রাসাদে তার উঠতি প্রভাবের একজন ভুক্তভোগী ছিলেন, বিশেষ করে অতীতে শাহজাদা মুস্তফাকে সমর্থন করার কারণে। প্রথম আহমেদের শাসনামলের আগপর্যন্ত সাম্রাজ্যে সুলতানের মৃত্যু হলে, উত্তরসূরি নির্বচনের কর্মকাণ্ডে বেসামরিক অস্থিরতা ও বিদ্রোহ প্রতিহত করতে প্রতিদ্বন্দ্বী রাজপুত্রদের গোপনে বা প্রকাশ্যে হত্যা করা হতো। নিজ পুত্রদের প্রাণদণ্ডকে এড়াতে, হুররেম মুস্তাফার রাজ্যাভিষেকের সমর্থকদের নির্মূল করতে নিজ প্রভাবকে কাজে লাগাতে শুরু করলো।[১৭] বহু বছর পর, সুলায়মানের দীর্ঘ শাসনামলের শেষের দিকে, তার পুত্রদের শত্রুতা আরও স্পষ্ট ও প্রকট আকার ধারণ করে।ঐতিহাসিক সূত্র দ্বারা জানা যায় ১৫৫৩ সালে সফভীয় ইরানের বিরুদ্ধে অভিযানকালে রুস্তম পাশা সুলেমানকে অবহিত করেন মুস্তাফা বিদ্রোহ করেছেন এবং সুলেমানকে হত্যার উদ্দেশ্যে বিশাল সৈনাবাহিনী নিয়ে এগিয়ে আসছেন। বিপরীতে মুস্তাফাকে বলা হয় ইরানের বিরুদ্ধে অভিযানের সময় সুলতান সুলেমান বিপদে পরেছেন এবং শাহজাদা মুস্তাফার সহায়তা চেয়েছেন। যার পরিণতিতে মুস্তাফা তার সৈন্যবাহিনী নিয়ে সুলতানকে সাহায্য করার জন্য রওনা হন।

সুলতানের তাবুর কাছে সৈন্যসমেত পৌঁছানর পর তাকে জানানো হয় ভেতরে সুলতান তার জন্য অপেক্ষা করছেন। মুস্তাফাকে নিরস্ত্র করে তাবুর ভেতরে প্রবেশ করানো হয়। 

 শাহজাদা মুস্তাফা সুলতান সুলায়মানের তাবুতে প্রবেশ করলে সুলেমানের নির্দেশে আগে থেকে ওত পেতে থাকা গুপ্ত ঘাতকেরা নিরস্ত্র মুস্তাফাকে আক্রমণ করে এবং শ্বাসরোধ করে হত্যা করে।  অনেক ইতিহাসবিদ এই মতামত মানতে চান না

জাহাঙ্গীর, হুররেমের কনিষ্ঠ সন্তান, তার প্রিয় এবং শ্রদ্ধাভাজন বড়ভাইয়ের মৃত্যুর খবর শুনে অত্যন্ত বেদনাকাতর হয়ে পড়েন। তিনি তার প্রিয় বড় ভাইয়ের মৃত্যু মেনে নিতে পারেননি। মুস্তাফার মৃত্যুতে তিনি তার বাবাকে দায়ী করেন এবং শারীরিক ও মানসিক ভাবে অত্যন্ত অসুস্থ হয়ে কয়েক মাস পরেই মারা যান।


[১৮] মুস্তফার মৃত্যুর পর, মাহিদেভরান প্রাসাদে তার অবস্থান হারান (আসন্ন উত্তরাধিকারীর মা হিসেবে) এবং বুরসায় গিয়ে মানবেতর জীবনযাপন করতে থাকেন।[১৫] শেষের দিকে তার সৎপুত্র দ্বিতীয় সেলিম সুলতান হওয়ার পর (১৫৬৬) তাকে নিয়মিত ভাতা দেয়ার ব্যবস্থা করায় তাকে আর দারিদ্রে ভুগতে হয় নি।[১৮] ১৫৫৮ সালে হুররেমের মৃত্যুর পরেই কেবলমাত্র তার পুনর্বাসন সম্ভবপর হয়।[১৮] জাহাঙ্গীর, হুররেমের কনিষ্ঠ সন্তান, তার সৎ-ভাইয়ের মৃত্যুর খবর শুনে বেদনাকাতর হয়ে কয়েক মাস পরেই মারা যান।[১৯]

১৫৫৩ সালে সুলায়মান মুস্তাফাকে প্রাণদণ্ড দেয়ার পর, সৈন্যদের মধ্যে বড়সড় ধরনের অসন্তুোষ ও অস্থিরতার উত্থান হয় যারা রুস্তম পাশাকে মুস্তফার মৃত্যুর জন্য দায়ী করেন। প্রজারা মানসিকভাবে ভেঙ্গে পরে বিলাপ করতে থাকে, চারিদিকে ধিক্কার শুরু হয়ে যায়। এ ঘটনায় সুলায়মান রুস্তম পাশাকে বরখাস্ত করেন এবং ১৫৫৩ সালে কারা আহমেদ পাশাকে প্রধান উজির হিসেবে নিয়োগ দেন। ১৫৫৫ সালে কারা আহমেদ পাশাকে দুর্নীতির দায়ে শ্বাসরোধ করে হত্যা করা হয় এবং রুস্তম পাশাকে আরও একবার প্রধান উজির (১৫৫৫-১৫৬১) হিসেবে নিয়োগ দেয়া হয়।

সুলায়মান হুররেম সুলতানকে অটোম্যান সম্রাজ্যের সম্রাজ্ঞী বানিয়েছিলেন আর তার সমান মর্যাদা দিয়েছিলেন। অটোম্যানের ইতিহাসে অন্য কারো সুলতানের স্ত্রীকে এই মর্যাদা দেয়া হয় নি। এমনকি সুলতান সুলেমান দরবারে সভায় হুররেমকে তার পাশে বসাতেন এবং সভায় যেকোন বিষয়ে হুররামের পরামর্শ নিতেন। এমনকি কোনো কোনো দাপ্তরিক কাগজে সুলতানের পাশাপাশি হুররেম সুলতানেরও স্বাক্ষর আর সিলমোহর নিতেন।

সুলায়মান বাকি জীবনে রাজসভাতেও হুররেমকে তার সাথে থাকতে দেন, যার ফলে আরেকটি প্রথা ভঙ্গ হয়, আর তা হল, যখন সাম্রাজ্যের উত্তরাধিকারীগণ উপযুক্ত বয়সে পৌঁছুবে, তাদেরকে তাদের রাজ উপপত্নীসহ (উত্তরাধিকারীদেরকে তাদের মাতাসহ) নিকটস্থ প্রদেশে শাসনের জন্য পাঠিয়ে দেয়া হবে, উক্ত উপপত্নীদের সন্তান ক্ষমতায় বসার আগ পর্যন্ত তারা ফিরে আসতে পারবে না।[২০] সুলতানের রাষ্ট্রীয় কার্যক্রম বিষয়ক উপদেষ্টা হিসেবেও হুররেম ভূমিকা পালন করেছেন, এবং প্রতীয়মান হয় যে তিনি বৈদেশিক নীতি ও আন্তর্জাতিক রাজনীতিতেও প্রভাব রেখেছিলেন।[] রাজা সিগিসমন্ডাস দ্বিতীয় অগাস্টাসকে প্রেরিত তার দুটি চিঠি এখনো টিকে আছে, এবং স্বভাবতই তার জীবদ্দশায় পোলিশ- অটোমান মৈত্রীচুক্তির মাধ্যমে পোল্যান্ড রাজ্যের সঙ্গে অটোম্যান সাম্রাজ্যের শান্তিপূর্ণ সম্পর্ক বিরাজমান ছিল।

সুলতান সুলেইমান তার "মুহিব্বি" নামক ছদ্মনাম ব্যবহার করে হুররেম সুলতানের জন্য নিম্নোক্ত কবিতাটি লিখেছিলেন:

"আমার নির্জনতার সিংহাসন, আমার সম্পত্তি, আমার প্রেম, আমার পূর্ণিমা।
আমার শ্রেষ্ঠ বন্ধু, আমার সখী, আমার চিরন্তন অস্তিত্ব, আমার সুলতান, আমার একমাত্র ভালোবাসা।
সুন্দরীদের মাঝে সবচেয়ে সুন্দরীতমা...
আমার বসন্তকাল, আমার সদা প্রফুল্ল মুখী ভালোবাসা, আমার দিবস, আমার প্রাণের প্রিয়া, আমার হাস্যোজ্জল পত্র...
আমার গুল্ম, আমার মিষ্টি, আমার গোলাপ, এ জগতে একমাত্র সেই আমাকে কোন দুঃখ দেয় নি...
আমার ইস্তাম্বুল, আমার কারামান, আমার আনাতোলিয়ার পৃথিবী
আমার বাদাকশান, আমার বাগদাদ আর খোরাসান
আমার সুকেশী রমণী, আমার হেলানো ভুরুর প্রণয়, আমার দুষ্টুমিভরা চোখের প্রেম...
আমি সর্বদা তোমার গুণ গাইবো
আমি, এই ভগ্ন হৃদয়ের প্রেমিক, অশ্রুভরা চোখের মুহিব্বি (প্রেমিক), আমিই তো সুখী।"[২১]

সমাজসেবামূলক ও ধর্মীয় কর্মকাণ্ড

[সম্পাদনা]
হুররেম সুলতান কর্তৃক নির্মিত তুর্কি স্নানাগার (হাম্মাম), কনস্টান্টিনোপল, ১৫৫৬

রাজনৈতিক উদ্যোগসমূহের পাশাপাশি, হুররেম মক্কা থেকে জেরুজালেম পর্যন্ত বহু রাষ্ট্রীয় স্থাপনার প্রধান কাজের সাথে জড়িত ছিলেন, সম্ভবত সেখানে খলিফা হারুনুর রশিদের স্ত্রী যুবাইদার কর্মের দ্বারা অনুপ্রাণিত হয়ে তিনি এ সকল সমাজসেবামূলক কার্যক্রম হাতে নেন। তার প্রথম স্থাপনাসমূহের মধ্যে ছিল একটি মসজিদ, দুটি মাদ্রাসা, একটি জলের ফোয়ারা, এবং কনস্টান্টিনোপলে নারী কৃতদাসী বাজারের (আভরেত পাজারি) সন্নিকটে একটি মহিলা হাসপাতাল। তার নির্দেশে নিকটবর্তী হাজিয়া সোফিয়ার উপাসক সম্প্রদায়ের সেবায় হাসেকি হুররেম সুলতান হামামি নামে একটি স্নানাগার নির্মিত হয়।[২২] ১৫৫২ সালে তিনি জেরুজালেমে দুস্থ ও অসহায়দের খাদ্যাভাব মেটাতে হাসেকি সুলতান ইমারেত নামে একটি রাষ্ট্রীয় লঙ্গরখানা প্রতিষ্ঠা করেন।[২৩]

হুররেম গরীব দুঃখীদের অনেক সাহায্য সহযোগীতা করতেন। এমনকি তিনি গরিব দুঃখীদের অবস্থা জানার জন্য ছন্দবেশে বাহিরে বের হতেন।

তার নিজের করা অথবা তার নিজস্ব তাত্তাবধানের অধীনে করা কিছু সূচিকর্ম এখনো বিদ্যমান আছে, উদাহরণস্বরূপ ১৫৪৭ সালে ইরানের শাহ দ্বিতীয় তাহমাস্পকে দেয়া এবং ১৫৪৯ সালে রাজা দ্বিতীয় সিগিসমন্ড অগাস্টাসকে দেয়া সূচিকর্ম।

এস্থার হান্ডালি বহু আনুষ্ঠানিকতায় তার সহকারী ও মধ্যস্থতাকারী হিসেবে দায়িত্ব পালন করেন।

মৃত্যু

[সম্পাদনা]
ইস্তাম্বুলের ফাতিহে অবস্থিত সুলায়মানিয়ে মসজিদে হুররেম সুলতানের তুরবে সমাধি।

হুররেম সুলতান ১৫ ই এপ্রিল ১৫৫৮ সালে মৃত্যুবরণ করেন এবং ইযনিক মার্বেলপাথর দ্বারা সুসজ্জিত গম্বুজবিশিষ্ট স্বর্গের উদ্যানের আদলে তৈরি করা সমাধিতে (তুরবা) তাকে সমাহিত করা হয়, এটি সম্ভবত তার সদা হাস্যোজ্জ্বল প্রকৃতির স্মৃতির প্রতি সম্মান রেখে করা হয়েছিল।[২৪] সুলায়মানের সমাধির পাশেই তার সমাধি অবস্থিত, যা সুলায়মানিয়ে মসজিদের প্রাঙ্গনে অবস্থিত আরও গাম্ভীর্যপূর্ণ গম্বুজবিশিষ্ট একটি পৃথক স্থাপত্য।

হুররেম সুলতানের মূত্যুর পর সুলতান সুলেমান নিজ কাঁধে তার শবাধার বহন করেন। অটোম্যান সাম্রাজ্যের ইতিহাসে কোনদিন কোন সুলতান তাদের স্ত্রীদের শবাধার বহন করেন নি। একমাত্র সুলতান সুলেমান তার প্রাণপ্রিয় স্ত্রী হুররেমের মৃত্যুর পর তার সন্তানদের সাথে হুররামের শবাধার বহন করে ছিলেন। হুররেমের মৃত্যুর পর সুলতান সুলেমান বেশ কয়েক দিন দুঃখে কাতর ছিলেন।

উত্তরাধিকার

[সম্পাদনা]

হুররেম হাসেকি সুলতান বা রোলেক্সানা, আধুনিক তুরস্ক ও পাশ্চাত্যের উভয় জগতে বহু শিল্পকর্মের বিষয়বস্তু হিসেবে জনপ্রিয়। ১৫৬১ সালে, হুররেমের মৃত্যুর তিন বছর পর,ফরাসি লেখক গ্যাব্রিয়েল বোনিন মুস্তাফার মৃত্যুতে হুররেম সুলতানের ভূমিকাকে কেন্দ্র করে লা সুলতানেনামে একটি ট্র্যাজেডি নাটিকা লেখেন।[২৫] এই নাটিকাটিই ফ্রান্সের নাট্যমঞ্চে প্রথমবারের মত অটোম্যানদের জীবনগাঁথা তুলে ধরে।[২৬] তিনি বহু চিত্রকর্ম, সঙ্গীত ( উদাহরণস্বরূপ জোসেফ হাইডন’র সিম্ফনি নং. ৬৩), ডেনিস সিচিনস্কির একটি অপেরা, একটি ব্যালে নৃত্য, অসংখ্য নাট্যকর্ম, এবং বহুসংখ্যক উপন্যাসের অনুপ্রেরণা ছিলেন, যার অধিকাংশই ছিল মূলত ইউক্রনীয় ভাষায়, পাশাপাশি ইংরেজি, ফরাসি এবং জার্মান ভাষায়।

প্রাচীন আধুনিক স্পেনে, কুয়েভেডো ও অন্যান্য লেখকের শিল্পকর্মে এবং পাশাপাশি লোপ ডি ভেগার বহু উপন্যাসে তার চরিত্রের উপস্থিতি দেখতে পাওয়া যায়। হলি লীগ নামক একটি নাটকে, টিটিয়ান চরিত্রটি মঞ্চে ভেনিসের সভায় প্রবেশ করেন, এবং বলেন যে তিনি এইমাত্র সুলতানার সাথে দেখা করে এসেছেন, এবং তারপর তিনি সুলতানা রোলেক্সানার আবক্ষ অঙ্কিত চিত্রকর্মটি দর্শকদের সামনে তুলে ধরেন।[২৭]

২০০৭ সালে, ইউক্রেনের মারিয়ুপোল নামক একটি বন্দর নগরীর মুসলিমগণ রোক্সেলানার সম্মানার্থে একটি মসজিদ প্রতিষ্ঠা করেন।[২৮]

২০০৩ সালে তুরস্কের হুররেম সুলতান নামক ধারাবাহিকে, তুর্কি অভিনেত্রী ও সঙ্গীতশিল্পী গুলবেন এরগেন রোক্সেলানার চরিত্রে অভিনয় করেন। ২০১১- ১৪ সালের তুরস্কের টিভি ধারাবাহিক মুহতেশেম ইউযিয়িল-এ, তুর্কি-জার্মান অভিনেত্রী মেরিয়েম উযেরলি প্রথম থেকে তৃতীয় মৌসুম পর্যন্ত এবং অবশিষ্ট চতুর্থ মৌসুমে ওয়াহিদে পারচিন হুররেম সুলতানের ভূমিকায় অভিনয় করেন।

চিত্রশালা

[সম্পাদনা]

আরও দেখুন

[সম্পাদনা]

তথ্যসূত্র

[সম্পাদনা]
  1. জন্মসূত্রের নাম অজ্ঞাত, পরবর্তী ঐতিহ্যবাহী ইতিহাস অনুযায়ী আনাস্তাসিয়া, অথবা আলেকজান্দ্রা লিসোভস্কা[]
  1. The Encyclopædia Britannica, Vol.7, Edited by Hugh Chisholm, (1911), 3; Constantinople, the capital of the Turkish Empire...
  2. Britannica, Istanbul ওয়েব্যাক মেশিনে আর্কাইভকৃত ১৮ ডিসেম্বর ২০০৭ তারিখে:When the Republic of Turkey was founded in 1923, the capital was moved to Ankara, and Constantinople was officially renamed Istanbul in 1930.
  3. Dr Galina I Yermolenko (২০১৩)। Roxolana in European Literature, History and Culturea। Ashgate Publishing, Ltd.। পৃষ্ঠা 275। আইএসবিএন 978-1-409-47611-5 
  4. Ukrainian Orthodox priest, Havrylo Lisowsky, father of Roxelana
  5. Leslie P. Peirce, The imperial harem: women and sovereignty in the Ottoman Empire, Oxford University Press US, 1993, আইএসবিএন ০-১৯-৫০৮৬৭৭-৫, pp. 58-59.
  6. The Imperial House of Osman GENEALOGY
  7. "Ayşe Özakbaş, Hürrem Sultan, Tarih Dergisi, Sayı 36, 2000"। ১৩ জানুয়ারি ২০১২ তারিখে মূল থেকে আর্কাইভ করা। সংগ্রহের তারিখ ২ ডিসেম্বর ২০১৫ 
  8. Ahmed, Syed Z (২০০১)। The Zenith of an Empire : The Glory of the Suleiman the Magnificent and the Law Giver। A.E.R. Publications। পৃষ্ঠা 43আইএসবিএন 978-0-9715873-0-4 
  9. Yermolenko, G. Roxolana: "The Greatest Empress of the East". — p. 234
  10. The Speech of Ibrahim at the Coronation of Maximilian II, Thomas Conley, Rhetorica: A Journal of the History of Rhetoric, Vol. 20, No. 3 (Summer 2002), 266.
  11. Kemal H. Karpat, Studies on Ottoman Social and Political History: Selected Articles and Essays, (Brill, 2002), 756.
  12. Elizabeth Abbott, Mistresses: A History of the Other Woman, (Overlook Press, 2010), [১].
  13. Kinross, Patrick (1979). The Ottoman centuries: The Rise and Fall of the Turkish Empire. New York: Morrow. আইএসবিএন ৯৭৮-০-৬৮৮-০৮০৯৩-৮. p, 236.
  14. Mansel, Phillip (1998). Constantinople : City of the World's Desire, 1453–1924. New York: St. Martin's Griffin. আইএসবিএন ৯৭৮-০-৩১২-১৮৭০৮-৮. p, 86.
  15. "Encyclopedia of the Ottoman Empire"। ১ জুন ২০০৮ তারিখে মূল থেকে আর্কাইভ করা। সংগ্রহের তারিখ ২ ডিসেম্বর ২০১৫ 
  16. Sakaoğlu, Necdet (২০০৭)। Famous Ottoman women (ইংরেজি ভাষায়)। Avea। পৃষ্ঠা 89। 
  17. Mansel, Phillip (১৯৯৮)। Constantinople : City of the World's Desire, 1453–1924। New York: St. Martin's Griffin। পৃষ্ঠা 84। আইএসবিএন 978-0-312-18708-8 
  18. Leslie, 55.
  19. Mansel, 89.
  20. Imber, Colin (2002). The Ottoman Empire, 1300–1650 : The Structure of Power. New York: Palgrave Macmillan. আইএসবিএন ৯৭৮-০-৩৩৩-৬১৩৮৬-৩. p, 90.
  21. A 400 Year Old Love Poem
  22. "Historical Architectural Texture"। Ayasofya Hürrem Sultan Hamamı। ২০ নভেম্বর ২০১৫ তারিখে মূল থেকে আর্কাইভ করা। সংগ্রহের তারিখ ১৯ নভেম্বর ২০১৫ 
  23. Peri, Oded. Waqf and Ottoman Welfare Policy, The Poor Kitchen of Hasseki Sultan in Eighteenth-Century Jerusalem, pg 169
  24. Öztuna, Yılmaz (১৯৭৮)। "Şehzade Mustafa"। İstanbul: Ötüken Yayınevi। আইএসবিএন 9754371415 
  25. The Literature of the French Renaissance by Arthur Augustus Tilley, p.87 [২]
  26. The Penny cyclopædia of the Society for the Diffusion of Useful Knowledge p.418 [৩]
  27. Frederick A. de Armas "The Allure of the Oriental Other: Titian's Rossa Sultana and Lope de Vega's La santa Liga," Brave New Words. Studies in Spanish Golden Age Literature, eds. Edward H. Friedman and Catherine Larson. New Orleans: UP of the South, 1996: 191-208.
  28. "Religious Information Service of Ukraine"। ২২ ডিসেম্বর ২০১২ তারিখে মূল থেকে আর্কাইভ করা। সংগ্রহের তারিখ ২ ডিসেম্বর ২০১৫ 

আরও পড়ুন

[সম্পাদনা]
  • Thomas M. Prymak, "Roxolana: Wife of Suleiman the Magnificent," Nashe zhyttia/Our Life, LII, 10 (New York, 1995), 15–20. An illustrated popular-style article in English with a bibliography.
  • Zygmunt Abrahamowicz, "Roksolana," Polski Slownik Biograficzny, vo. XXXI (Wroclaw-etc., 1988–89), 543–5. A well-informed article in Polish by a distinguished Polish Turkologist.
  • Galina Yermolenko, "Roxolana: The Greatest Empresse of the East," The Muslim World, 95, 2 (2005), 231–48. Makes good use of European, especially Italian, sources and is familiar with the literature in Ukrainian and Polish.
  • Galina Yermolenko (ed.), Roxolana in European Literature, History and Culture (Farmham, UK: Ashgate, 2010). 318 pp. Illustrated. Contains important articles by Oleksander Halenko and others, as well as several translations of works about Roxelana from various European literatures, and an extensive bibliography.
  • There are many historical novels in English about Roxelana: P.J. Parker's Roxelana and Suleyman (2012); Barbara Chase Riboud's Valide (1986); Alum Bati's Harem Secrets (2008); Colin Falconer, Aileen Crawley (1981–83), and Louis Gardel (2003); Pawn in Frankincense, the fourth book of the Lymond Chronicles by Dorothy Dunnett; and pulp fiction author Robert E. Howard in The Shadow of the Vulture imagined Roxelana to be sister to its fiery-tempered female protagonist, Red Sonya.
  • For Ukrainian language novels, see Osyp Nazaruk (1930), Mykola Lazorsky (1965), Serhii Plachynda (1968), and Pavlo Zahrebelnyi (1980). (All reprinted recently.)
  • There have been novels written in other languages: in French, a fictionalized biography by Willy Sperco (1972); in German, a novel by Johannes Tralow (1944, reprinted many times); a very detailed novel in Serbo-Croatian by Radovan Samardzic (1987); one in Turkish by Ulku Cahit (2001).

বহিঃসংযোগ

[সম্পাদনা]
উসমানীয় রাজপদবী
পূর্বসূরী
কেউ না
নতুন উপাধি
হুররেম হাসেকি সুলতান
১৯ মার্চ ১৫৩৪ – ১৫ এপ্রিল ১৫৫৮
উত্তরসূরী
নুরবানু সুলতান