বিষয়বস্তুতে চলুন

ইউরেনাস গ্রহ

উইকিপিডিয়া, মুক্ত বিশ্বকোষ থেকে
ইউরেনাস ⛢
The planet Uranus
ইউরেনাস, ভয়েজার ২ থেকে তোলা ছবি
আবিষ্কার
আবিষ্কারকউইলিয়াম হার্শেল
আবিষ্কারের তারিখ১৩ মার্চ, ১৭৮১
বিবরণ
বিশেষণইউরেনিয়ান
কক্ষপথের বৈশিষ্ট্য
যুগ জে২০০০
অপসূর৩,০০৬,৩৮৯,৪০৫ km
২০.০৯৬ ৪৭১ ৯০ AU
১,৮৬৮,০৮৮,২৪৯ miles
অনুসূর২,৭৩৫,৫৫৫,০৩৫ km
১৮.২৮৬ ০৫৫ ৯৬ AU
১,৬৯৯,৭৯৯,১৬৯ miles
অর্ধ-মুখ্য অক্ষ২,৮৭০,৯৭২,২২০ km
১৯.১৯১ ২৬৩ ৯৩ AU
১,৭৮৩,৯৪৩,৭১০ miles
উৎকেন্দ্রিকতা০.০৪৭ ১৬৭ ৭১
যুতিকাল৩৬৯.৬৫ দিন
গড় কক্ষীয় দ্রুতি৬.৭৯৫ কিমি/সেকেন্ড
নতি০.৭৬৯ ৮৬°
(৬.৪৮° to Sun's equator)
উদ্বিন্দুর দ্রাঘিমা৭৪.২২৯ ৮৮°
উপগ্রহসমূহ২৭টি
ভৌত বৈশিষ্ট্যসমূহ
বিষুবীয় ব্যাসার্ধ২৫,৫৫৯ km
(৪.০০৭ Earths)
মেরু ব্যাসার্ধ২৪,৯৭৩ km
(৩.৯২৯ Earths)
পৃষ্ঠের ক্ষেত্রফল৮.০৮৪×১০9 km2
(১৫.৮৪৯ Earths)
আয়তন৬.৮৩৪×১০১3 km3
(৬৩.০৮৬ Earths)
ভর৮.৬৮৩২×১০২5 kg
(১৪.৫৩৬ Earths)
গড় ঘনত্ব১.৩১৮ g/cm3
বিষুবীয় পৃষ্ঠের অভিকর্ষ৮.৬৯ m/s2
(০.৮৮৬ g)
মুক্তি বেগ২১.২৯ কিমি/সেকেন্ড
নাক্ষত্রিক ঘূর্ণনকাল−০.৭১৮ ৩৩ day (১৭ h ১৪ min ২৪ s by convention)[]
বিষুবীয় অঞ্চলে ঘূর্ণন বেগ২.৫৯ km/s = ৯৩২০ km/h
অক্ষীয় ঢাল৯৭.৭৭°
উত্তর মেরুর বিষুবাংশ৭৭.৩১° (৫ h ৯ min ১৫ s)
উত্তর মেরুর বিষুবলম্ব+১৫.১৭৫°
প্রতিফলন অনুপাত০.৫১
পৃষ্ঠের তাপমাত্রা ন্যূন মধ্যক সর্বোচ্চ
Surface ৫৯ K ৬৮ K N/A
Cloudtop ৫৫ K
বায়ুমণ্ডল
পৃষ্ঠের চাপ১২০kPa (at the cloud level)
গঠন(Below ১.৩ bar)

Gases:

  • ৮৩ ± ৩% হাইড্রোজেন (H2)
  • ১৫ ± ৩% হিলিয়াম (He)
  • ২.৩% মিথেন (CH4)
  • ০.০০৯% (০.০০৭–০.০১৫%) hydrogen deuteride (HD)
  • hydrogen sulphide (H2S)[]

Ices:

ইউরেনাস সৌরজগতের একটি গ্রহসূর্যের দিক থেকে এর অবস্থান সপ্তম এবং আকারের বিচারে তৃতীয় বৃহত্তম। এই গ্রহের আবিষ্কারের সাথে উইলিয়াম হার্শেল-এর নাম বিশেষভাবে জড়িত। মূলত এই গ্রহটিকে অনেক জ্যোতির্বিজ্ঞানীই আগে লক্ষ্য করেছিলেন, কিন্তু তারা এটাকে সৌরজগতের গ্রহ হিসাবে বিবেচনায় আনতে পারেননি। ১৬৯০ খ্রিষ্টাব্দে জন ফ্লামস্টিড অন্তত ছয়বার এই গ্রহটিকে দেখতে পান। তিনি তার নক্ষত্র তালিকায় এই গ্রহটিকে বৃষ নক্ষত্রমণ্ডলের একটি নক্ষত্র হিসাবে নামকরণ করেছিলেন ৩৪ তাউরি। ফরাসি জ্যোতির্বিজ্ঞানী পিয়েরে লেমোনিয়ার ১৭৫০ থেকে ১৭৬৯ খ্রিষ্টাব্দের ভিতরে প্রায় ১২ বার এই গ্রহটি পর্যবেক্ষণ করেন। কিন্তু তিনিও একে নক্ষত্র হিসাবেই চিহ্নিত করেছিলেন। স্যার উইলিয়াম হার্শেল এই গ্রহটিকে প্রথম ১৭৮১ খ্রিষ্টাব্দের ১৩ মার্চে বিশেষভাবে পর্যবেক্ষণ করেন এবং ঐ বৎসরের ২৬ এপ্রিলে একে একটি ধূমকেতু হিসাবে উল্লেখ করেন। পরে আরও গভীরভাবে পর্যবেক্ষণের পর তিনি একে সৌরজগতের গ্রহ হিসাবে স্বীকৃতি দেন। প্রথমাবস্থায় অনেক জ্যোতির্বিজ্ঞানীই এটা মানতে চাননি। শেষ পর্যন্ত এটিকে গ্রহ হিসাবে আন্তর্জাতিকভাবে স্বীকার করে নেওয়া হয়।

নামকরণ

[সম্পাদনা]

ভারত, চিন, গ্রিস বা মিশরের প্রাচীন জ্যোতির্বিজ্ঞানে এই গ্রহের কোনো নাম পাওয়া যায় না। এই কারণে গোড়াতেই হার্শেল বা অন্যকোনো জ্যোতির্বিজ্ঞানী কোনো বিশেষ নামে একে চিহ্নিত করেননি। এই গ্রহের নামকরণের জন্য প্রথমে হার্সেলকে অনুরোধ করা হয়েছিল। হার্সেল তৎকালীন ইংল্যান্ডের রাজা King George III-এর নামানুসারে এর নামকরণ করতে চেয়েছিলেন Georgium Sidus (George's Star)। কিন্তু ইংল্যান্ডের বাইরে এই নামকে কেউ মেনে নিলেন না। ফলে বিকল্প নামের প্রয়োজন পড়লো। জ্যোতির্বিজ্ঞানী Jérôme Lalande আবিষ্কারকের নামনুসারে এর নাম Herschel রাখার প্রস্তাব দিয়েছিলেন। ইউরোপে মহাকাশীয় লক্ষ্যবস্তুগুলোর নাম গ্রিক পৌরাণিক চরিত্র থেকে নেওয়ার রীতিটি ঐতিহ্যে পরিণত হয়েছিল। সেই সূত্রে সুইডিশ জ্যোতির্বিজ্ঞানী Erik Prosperin এই গ্রহটির নাম নেপচুন (Neptune) রাখার প্রস্তাব দেন। কিন্তু এই গ্রহের কক্ষপথ নির্ণয়কারী জার্মান বিজ্ঞানী Johann Elert Bode এর নাম দেন ইউরেনাস। বোদে যুক্তি দেখান যে- সূর্যের দিক থেকে Jupiter (বৃহস্পতি) -এর পরে রয়েছে Saturn (শনি)। গ্রিক পুরাণ মতে জুপিটরের পিতা হলেন স্যাটার্ন। ইউরেনাস যেহেতু স্যাটার্নের পিতা, সেই কারণে স্যাটার্নের পরের গ্রহের নাম হওয়া উচিত ইউরেনাস। অবশেষে ১৮৫০ খ্রিস্টাব্দ থেকে ইউরেনাস নামটিই আন্তর্জাতিকভাবে স্বীকৃতি লাভ করে।

দৈহিক বৈশিষ্ট্য

[সম্পাদনা]

এর ব্যাস নেপচুনের চেয়ে একটু বেশি কিন্তু পৃথিবীর চেয়ে প্রায় ৪গুণ বেশি। এর বিষুব এলাকার ব্যাসার্ধ ২৫,৫৫৯ ±৪ কিলোমিটার। মেরু অঞ্চলের ব্যাসার্ধ ২৪,৯৭৩ ±২০ কিলোমিটার। এর পরিধি ১,৫৯,৩৫৪.১ কিলোমিটার। এর উপরিতলের এলাকার পরিমাণ ৮,১১৫.৬X১০৯ কিলোমিটার। এর আয়তন ৬,৮৩৩.৬X১০১৩ কিলোমিটার। এর ভর ৮,৬৮১০±০.০০১৩X১০২৫ কিলোগ্রাম। পৃথিবীর তুলনায় এই গ্রহ প্রায় ১৪.৫ গুণ বেশি ভারি। এর ঘনত্ব ১.২৭ গ্রাম/ঘন সেন্টিমিটার। বিষুব এলাকার মাধ্যাকর্ষণ শক্তি ৮.৬৯ মিটার/সেকেন্ড, ০.৮৮৬ গ্রাম।

এর অভ্যন্তরে কেন্দ্রে রয়েছে সিলিকেট, লৌহ ও নিকেল মিশ্রিত পিণ্ড, এর ব্যাপ্তী ২২,০০০ কিলোমিটার। এরপর ১০,০০০ কিলোমিটার জুড়ে রয়েছে বরফের আবরণ। এরপর রয়েছে ৫,০০০ কিলোমিটার জুড়ে হাইড্রোজেন, হিলিয়াম ও মিথেনের গ্যাসীয় বলয়।

এর একটি মেরু সূর্যের দিকে প্রায় ৪২ বৎসর থাকে, এই সময় অন্য মেরু অন্ধকারে থাকে। ইউরেনাসে সূর্যের আলোর তীব্রতা পৃথিবীর ৪০০ ভাগের ১ ভাগ পরিমাণ। এর উপরিতলের গড় তাপমাত্রা -১৮২ ডিগ্রি সেলসিয়াস। তবে শীতলতম অবস্থায় তাপমাত্রার পরিমাণ দাঁড়ায় -২২৪ সেলসিয়াস। বিষুব অঞ্চলে প্রায় ২৫০ মিটার/সেকেন্ড বেগে বাতাস প্রবাহিত হয়।

কক্ষপথ

[সম্পাদনা]

সূর্যকে একবার প্রদক্ষিণ করে আসতে ইউরেনাসের সময় লাগে পার্থিব ৮৪ বৎসর। সূর্য থেকে এর সর্বোচ্চ দূরত্ব ৩,০০,৪৪,১৯,৭০৪ কিলোমিটার এবং সর্বনিম্ন দূরত্ব ২,৭৪,৮৯,৩৮,৪৬১ কিলোমিটার। কক্ষপথে এর গড় গতি ৬.৮১ কিলোমিটার/সেকেন্ড। এর নাক্ষত্রিক আবর্তন কাল ০.৭১৮৩৩ দিন বা ১৭ ঘণ্টা ১৪ মিনিট। এটি পূর্ব থেকে পশ্চিম দিকে আবর্তিত হয়। অর্থাৎ এই গ্রহটি ঘড়ির কাঁটার দিকে ঘোরে।

বলয় ও উপগ্রহ

[সম্পাদনা]

বলয়

এই গ্রহকে ঘিরে রয়েছে অনেকগুলো বলয়। এই বলয়গুলোর বিস্তার মাইক্রোমিটার থেকে সর্বোচ্চ ১ মিটার পর্যন্ত। এ পর্যন্ত অন্তত দুটি বলয়ের সন্ধান পাওয়া গেছে, যাদের বিস্তৃতি কয়েক কিলোমিটার। এই বলয়গুলোর উপাদান উপগ্রহের খণ্ডাংশ দ্বারা গঠিত বলেই অনুমান করা হয়। এখন পর্যন্ত ১৩টি উজ্জ্বল বলয় সম্পর্কে ধারণা করা গেছে। দূর থেকে টেলিস্কোপের সাহয্যে এই বলয়গুলো সম্পর্কে যে ধারণা করা হয়েছিল, Voyager ২-এর পাঠানো তথ্যানুসারে এ সকল বলয় সম্পর্কে আরও নিশ্চিত হওয়া গেছে। এদের বলয়গুলোর রঙ ভিন্ন ভিন্ন ধরনের। হাল্কা ধূসর, লাল, নীল রঙের বলয় দেখা যায়।

উপগ্রহ

ইউরেনাসের ২৭ টি জানা উপগ্রহ রয়েছে। এরা হলো:

  1. কোর্ডেলিয়া (Cordelia)
  2. ওফেলিয়া (Ophelia)
  3. বিয়ানকা (Bianca)
  4. ক্রেসিডা (Cressida)
  5. ডেসডেমোনা (Desdemona)
  6. জুলিয়েট (Juliet)
  7. পোর্শিয়া (Portia)
  8. রোজালিন্ড ‌(Rosalind)
  9. কুপিড (Cupid)
  10. বেলিন্ডা (Belinda)
  11. পার্ডিটা (Perdita)
  12. পাক (Puck)
  13. ম্যাব (Mab)
  14. মিরান্ডা (Miranda)
  15. এরিয়েল (Ariel)
  16. আম্ব্রিয়েল (Umbriel)
  17. টাইট্যানিয়া (Titania)
  18. ওবেরোন ‌(Oberon)
  19. ফ্রান্সিস্কো (Fransisco)
  20. ক্যালিব্যান (Caliban)
  21. স্টেফানো (Stephano)
  22. টাইনকুলো (Tienculo)
  23. সাইকোরাক্স (Sycorax)
  24. মার্গারেট (Margaret)
  25. প্রোস্পেরো (Prospero)
  26. সেটেবোস (Setebos)
  27. ফার্ডিন্যান্ড (Ferdinand)

আরোও দেখুন

[সম্পাদনা]

তথ্যসূত্র

[সম্পাদনা]
  1. "সংরক্ষণাগারভুক্ত অনুলিপি"। সংগ্রহের তারিখ ২৬ ফেব্রুয়ারি ২০০৭  |আর্কাইভের-ইউআরএল= ত্রুটিপূর্ণভাবে গঠিত: timestamp (সাহায্য)
  2. Irwin, Patrick G. J.; Toledo, Daniel; Garland, Ryan; Teanby, Nicholas A.; Fletcher, Leigh N.; Orton, Glenn A.; Bézard, Bruno (২৩ এপ্রিল ২০১৮)। "Detection of hydrogen sulfide above the clouds in Uranus's atmosphere" (পিডিএফ)Nature Astronomy (৫): ৪২০–৪২৭। hdl:২৩৮১/৪২৫৪৭এসটুসিআইডি ১০২৭৭৫৩৭১ Check |s2cid= value (সাহায্য)ডিওআই:১০.১০৩৮/s৪১৫৫০-০১৮-০৪৩২-১ |doi= এর মান পরীক্ষা করুন (সাহায্য)বিবকোড:২০১8NatAs...২..৪২0I |বিবকোড= length পরীক্ষা করুন (সাহায্য)। সংগ্রহের তারিখ ২৫ আগস্ট ২০১৯  |আর্কাইভের-ইউআরএল= ত্রুটিপূর্ণভাবে গঠিত: timestamp (সাহায্য); |display-authors=১ অবৈধ (সাহায্য)

আরোও পড়ুন

[সম্পাদনা]

বহিঃসংযোগ

[সম্পাদনা]