পাণিনি
পাণিনি | |
---|---|
জন্ম | খ্রিস্টপূর্ব সপ্তম শতাব্দী বর্তমান পাকিস্তানের লাহোর শহরের নিকট শালাতুর গ্রাম |
মৃত্যু | ত্রয়োদশী তিথি |
পেশা | ব্যাকরণবিদ ও কবি |
জাতীয়তা | ভারতীয় |
ধরন | সংস্কৃত ব্যাকরণ নিয়মাবলীর স্রষ্টা |
বিষয় | অষ্টাধ্যায়ী, লিঙ্গানুশাসনম্, জাম্বুবতীবিজয়ম্ |
উল্লেখযোগ্য রচনাবলি | অষ্টাধ্যায়ী |
সঙ্গী | দাক্ষী (মাতা), পণিন (শালঙ্কি) (পিতা) |
পাণিনি (সংস্কৃত: সংস্কৃত: पाणिनि, আইপিএ: [pɑːɳin̪i], পারিবারিক নাম, অর্থ "পাণির বংশধর") ছিলেন একজন প্রাচীন ভারতীয় লৌহযুগের সংস্কৃত ব্যাকরণবিদ, ভাষাতত্ত্ববিদ, এবং প্রাচীন ভারতে শ্রদ্ধেয় পণ্ডিত। তিনি খ্রিষ্টপূর্ব চতুর্থ শতাব্দীতে গান্ধার রাজ্যের পুষ্কলাবতী নগরীতে বিদ্যমান ছিলেন।[১][২]
পাণিনিকে প্রথম “বর্ণনামূলক ভাষাবিদ" হিসাবে এবং "ভাষাবিজ্ঞানের জনক" হিসাবে চিহ্নিত করা হয়।[৩] তার রচিত অষ্টাধ্যায়ী নামক সংস্কৃত ব্যাকরণ গ্রন্থের জন্য তিনি বিখ্যাত।
জীবনকাল
[সম্পাদনা]পাণিনি সঠিক সময়কাল সম্পর্কে নির্দিষ্ট কিছু জানা যায় না। ধারণা করা হয়, তিনি খ্রিস্টপূর্ব সপ্তম হতে খ্রিস্টপূর্ব চতুর্থ শতাব্দির মাঝামাঝি কোনো সময়ে উপস্থিত ছিলেন।[৪][৫][৬][৭][৮]
জর্জ কার্ডোনা তার প্রামাণিক সমীক্ষা এবং পাণিনি-সম্পর্কিত গবেষণার পর্যালোচনাতে তিনি বলেছেন যে উপলব্ধ প্রমাণগুলি ৪০০ হতে ৩৫০ খ্রিস্টপূর্বাব্দের মধ্যে কোনো সময়কে জোরালোভাবে সমর্থন করে, যখন আগের ডেটিং ব্যাখ্যার উপর নির্ভর করে এবং এটি সম্ভাব্য নয়।[৮]
সংখ্যাগত অনুসন্ধানের ভিত্তিতে, ভন হিনবার (১৯৮৯) এবং ফক (১৯৯৩) খ্রিস্টপূর্ব চতুর্থ শতাব্দীর মাঝামাঝি পাণিনিকে স্থান দেন।[৫][৬][৭][৪] পাণিনির রূপ্যা (A ৫.২.১১৯, A ৫.২.১২০, A. ৫.৪.৪৩, A ৪.৩.১৫৩,) বেশ কয়েকটি সূত্রে একটি নির্দিষ্ট স্বর্ণমুদ্রা, নিস্কের উল্লেখ আছে,[৯] যেটি ভারতে চালু হয়েছিল খ্রিস্টপূর্ব ৪র্থ শতাব্দীতে।[৭] হাউবেনের মতে, "তারিখ" আনু. ৩৫০ খ্রিস্টপূর্ব পাণিনির জন্য এইভাবে সুনির্দিষ্ট প্রমাণের উপর ভিত্তি করে যা এখন পর্যন্ত খণ্ডন করা হয়নি।"[৭] ব্রঙ্কহর্স্টের মতে, ভন হিনবার এবং ফাল্কের যুক্তির বৈধতা নিয়ে সন্দেহ করার কোনো কারণ নেই, পাণিনির তারিখের জন্য টার্মিনাস পোস্ট কোয়েম [ক] ৩৫০ খ্রিস্টপূর্বাব্দে বা তার পরের দশকগুলি নির্ধারণ করে।[৪] ব্রঙ্কহর্স্টের মতে,
জন্ম ও শৈশব
[সম্পাদনা]যতদূর জানা গেছে পাণিনি বর্তমান পাকিস্তানের রাওয়ালপিন্ডি অঞ্চলের (প্রাচীন ভারতবর্ষের অন্তর্গত) আটকের নিকট শালাতুর গ্রামে জন্মগ্রহণ করেছিলেন। তিনি দাক্ষীর পুত্র। পাণিনির যুগ বা কাল নিয়ে কোনো নিশ্চিত তথ্য পাওয়া যায় নি। ড. আহমদ শরীফের মতে তিনি খ্রিষ্টপূর্ব ৭ম শতকে বর্তমান ছিলেন। পাশ্চাত্যের গো সু স্টুকারের মতে তার কাল ছিল খ্রিষ্টপূর্ব ৮ম শতাব্দী। জার্মান পণ্ডিত ম্যাক্সমুলার এবং অয়েবার মনে করেন পাণিনির সময়কাল খ্রিষ্টপূর্ব ৪র্থ শতাব্দী। কথাসরিৎসাগর অনুসারে পাণিনি বর্ষ নামক আচার্যের নিকট থেকে ব্যাকরণ শিক্ষা গ্রহণ করেন। ইন্দ্রদত্ত এবং ব্যাদি ছিলেন তার সামসময়িক সহপাঠী।[১০]
অষ্টাধ্যায়ী
[সম্পাদনা]পাণিনি তার অষ্টাধ্যায়ী নামক সংস্কৃত ব্যাকরণ গ্রন্থের জন্য বিখ্যাত, এবং এই গ্রন্থটি তিনি ২০০০ বছরেরও বেশি আগে রচনা করেন [১১]। পাণিনির জ্ঞানগর্ভ ও বিজ্ঞানসম্মত ব্যাকরণ তত্ত্ব বৈদিক সংস্কৃতের অন্তকাল ও ধ্রুপদি সংস্কৃতের সূচনাকালের সন্ধিক্ষণ রূপে পরিগণিত হয়।
অষ্টাধ্যায়ীর ভাষা বর্ণনা করার জন্য ব্যুৎপত্তি-সংক্রান্ত পদ্ধতি ব্যবহার করা হয়, যেখানে কিছু নির্দিষ্ট অবস্থার ভিত্তিতে যোগ করা অ্যাফিক্সের মাধ্যমে গঠিত প্রকৃত বিমূর্ত উচ্চারণ থেকে প্রকৃত বক্তৃতা উদ্ভূত হয়। অষ্টাধ্যায়ীর তিনটি সহায়ক গ্রন্থ দ্বারা পরিপূরক: অক্ষর-সমন্বয়, ধাতুপাঠ ও গণপাঠ।
বৈদিক স্তোত্রের ভাষাকে প্রক্ষিপ্ততা হতে রক্ষার উদ্দেশ্যে শতাব্দীর দীর্ঘ প্রচেষ্টার মাধ্যমে বেড়ে উঠা অষ্টাধ্যায়ী রচনাটি ভাষার পরিবর্তন রোধ করতে প্রণিত শক্তিশালি পদক্ষেপ। অষ্টাধ্যায়ী সংস্কৃত ভাষার প্রাচীনতম ব্যাকরণগুলির অন্যতম পাঠ্য, যদিও তা প্রথম রচিত ব্যকরণশাস্ত্র নয়।[১২][১৩][১৪][১৫] পাণিনি উনাদিসূত্র, ধাতুপাঠ, গণপাঠ প্রভৃতি তার পূর্বসূরিদের কয়েকটি ব্যাকরণগ্রন্থের নাম উল্লেখ করেছেন এবং তা হতে অন্তর্ভক্তও করেছেন।[২] পাণিনির ব্যাকরণ বর্ণনামূলক ভাষাবিজ্ঞান ও সৃষ্টিশীল ভাষাবিজ্ঞানের প্রাচীনতম উপলব্ধ গ্রন্থ। নিরুক্ত, নিঘণ্টু ও প্রাতিশাখ্য গ্রন্থগুলির সঙ্গে পাণিনির ব্যাকরণ ভাষাবিজ্ঞানের ইতিহাসের সূচনা ঘটায়।
এই গ্রন্থে তিনি সংস্কৃত রূপমূলতত্ত্বের ৩,৯৫৯টি সূত্র বা নিয়ম অন্তর্ভুক্ত করেন।[২] এই গ্রন্থটি বৈদিক ধর্মের প্রামাণ্য সহায়ক গ্রন্থ বেদাঙ্গের ব্যাকরণ শাখার মূল গ্রন্থ। এই গ্রন্থের অধ্যায় সংখ্যা ৮ এবং সূত্রসংখ্যা ৩৮৬৩টি। গ্রন্থটি আটটি অধ্যায়ে বিভক্ত বলে এর নাম অষ্টাধ্যায়ী। প্রতি অধ্যায়ে চারটি পাদ বা পর্ব আছে। এর জটিলতা এতই যে এর সঠিক নিয়মবিধির প্রয়োগ নিয়ে শতাব্দী ধরে এখনো কাজ করা হচ্ছে।[১৬][১৭] এই গ্রন্থে সন্ধি, সুবন্ত, কৃদন্ত, উণাদি, আখ্যাত, নিপাত, উপসংখ্যান, স্বরবিধি, শিক্ষা, তদ্ধিত প্রভৃতি ব্যাকরণিক বিষয় স্থান পেয়েছে।[১৮]
অষ্টাধ্যায়ী এমন এক যুগের রচনা যখন মৌখিক পরম্পরাগত পাঠদান হতো। শাস্ত্রের অধিক প্রচারের উদ্দেশ্যে পাণিনি একে সংক্ষিপ্ত সূত্র আকারে প্রকাশ করেন।[১৯] যার ফলে বহু শতাব্দী ধরে এর উপর প্রচুর ভাষ্য রচিত হয়, যা পাণিনির স্থাপিত ভিত্তিকে অনুসরণ করে।[২০][২১]
পাণিনির সমালোচনা করে বার্ত্তিককার কাত্যায়ন যা লিখেছিলেন এবং কাত্যায়নকে সমালোচনা করে পতঞ্জলি যা লিখেছিলেন সবগুলোই শেষ পর্য্যন্ত পাণিনির অষ্টাধ্যায়ী ব্যাকরণেরই অঙ্গ হয়ে উঠল। সেই জন্য পাণিনির অস্টাধ্যায়ী ব্যাকরণকে ত্রিমুনি ব্যাকরণ বলা হয়।
ভট্টিকাব্য
[সম্পাদনা]ধ্রুপদী যুগের শেষের দিকে ভারতীয় পাঠ্যক্রমের শিক্ষার অন্তরে ব্যাকরণগত অধ্যয়ন এবং ভাষাগত বিশ্লেষণের ব্যবস্থা ছিল।[২২] এই অধ্যয়নের মূল পাঠটি ছিল পাণিনির অষ্টাধ্যায়ী, যা শিক্ষার মূল বিষয় ।[২৩] পাণিনির এই ব্যাকরণটি ভট্টিকাব্য রচনার আগে দশ শতাব্দী ধরে গভীর অধ্যয়নের বিষয় ছিল। স্পষ্টতই ভট্টির উদ্দেশ্য ছিল রামায়ণ-এর আঁকড়ে ধরা এবং নৈতিকভাবে উন্নতির গল্পের পরিপ্রেক্ষিতে বিদ্যমান ব্যাকরণগত ভাষ্যগুলিতে ইতিমধ্যে দেওয়া উদাহরণগুলি ব্যবহার করে পাণিনির পাঠে একটি অধ্যয়ন সহায়তা প্রদান করা। এই ব্যাকরণের শুকনো হাড়কে ভট্টি তাঁর কবিতায় রসালো মাংস দিয়েছেন। লেখকের উদ্দেশ্য ছিল এই উন্নত বিজ্ঞানকে তুলনামূলক সহজ ও আনন্দদায়ক মাধ্যমে শেখানো।
আরও দেখুন
[সম্পাদনা]পাদটীকা
[সম্পাদনা]- ↑ Frits Staal, Euclid and Pāṇini, Philosophy East and West, 1965; R. A. Jairazbhoy, On Mundkur on Diffusion, Current Anthropology (1979).
- ↑ ক খ গ Sanskrit Literature The Imperial Gazetteer of India, v. 2, p. 263.
- ↑ François & Ponsonnet (2013: 184).
- ↑ ক খ গ Bronkhorst 2019।
- ↑ ক খ Vergiani 2017।
- ↑ ক খ Bronkhorst 2016।
- ↑ ক খ গ ঘ Houben 2009।
- ↑ ক খ Cardona 1997।
- ↑ Pāṇini (১৯৮৯)। Aṣṭādhyāyī of Pāṇini (ইংরেজি ভাষায়)। Motilal Banarsidass Publ.। আইএসবিএন 978-81-208-0521-7।
- ↑ বৈদিক ব্যাকরণ, ধীরেন্দ্রনাথ তরফদার, বাংলা একাডেমি
- ↑ https://indianexpress.com/article/explained/explained-culture/panini-grammar-puzzle-ashtadhyayi-rishi-rajpopat-explained-8329338/
- ↑ Burrow, §2.1.
- ↑ Coulson, p. xv.
- ↑ Whitney, p. xii.
- ↑ Cardona, §4.
- ↑ "Cambridge PhD student solves 2,500-year-old Sanskrit problem"। BBC News। ১৫ ডিসেম্বর ২০২২।
- ↑ "Solving grammar's greatest puzzle"। University of Cambridge। ১৫ ডিসেম্বর ২০২২।
- ↑ সিদ্ধান্তকৌমুদীর আলোকে কৃৎ প্রত্যয় বিচার, দিলীপ কুমার ভট্টাচার্যয়, বাংলা একাডেমি
- ↑ Whitney, p. xiii
- ↑ Coulson, p xvi.
- ↑ Burrow, §2.1.
- ↑ Filliozat. 2002 The Sanskrit Language: An Overview – History and Structure, Linguistic and Philosophical Representations, Uses and Users. Indica Books.
- ↑ Fallon, Oliver. 2009. Bhatti's Poem: The Death of Rávana (Bhaṭṭikāvya). New York: Clay Sanskrit Library. আইএসবিএন ৯৭৮-০-৮১৪৭-২৭৭৮-২ | আইএসবিএন ০-৮১৪৭-২৭৭৮-৬ |
টীকা
[সম্পাদনা]- ↑ the earliest time an event may have happened
তথ্যসূত্র
[সম্পাদনা]- Pāṇini. Ashtādhyāyī. Book 4. Translated by Chandra Vasu. Benares, 1896. (সংস্কৃত)(ইংরেজি)
- ও'কনর, জন জে.; রবার্টসন, এডমুন্ড এফ., "পাণিনি", ম্যাকটিউটর গণিতের ইতিহাস আর্কাইভ, সেন্ট অ্যান্ড্রুজ বিশ্ববিদ্যালয় । 2000.
- Prince, Alan and Paul Smolensky (2004): Optimality Theory: Constraint Interaction in Generative Grammar. Oxford: Blackwell.
- Kadvany, John (2007). Positional Value and Linguistic Recursion. Journal of Indian Philosophy December 2007.
- T.R.N. Rao. Panini-backus form of languages. 1998.
বহিঃসংযোগ
[সম্পাদনা]- Panini biography, at the MacTutor History of Mathematics archive
- PaSSim - Paninian Sanskrit Simulator simulates the Paninian Process of word formation
- The system of Panini
- Ganakastadhyayi, a software on Sanskrit grammar, based on Panini's Sutras
- Indian Logic and Ontology: A Survey of Contemporary Studies
- Forizs, L. Panini, Nagarjuna and Whitehead - The Relevance of Whitehead for Contemporary Buddhist Philosophy
- Video interview with Partha Niyogi on computers and Panini's grammar Designing Intelligence: Language Acquisition as a Model for Teaching Computers to Learn ওয়েব্যাক মেশিনে আর্কাইভকৃত ২১ জুলাই ২০১১ তারিখে
- The Astadhyayi of Panini, with the Mahabhashya and Kashika commentaries, along with the Nyasa and Padamanjara commentaries on the Kashika. (PDF) Sanskrit.