“নিরাপদ সড়ক আন্দোলনে, কোটা সংস্কার আন্দোলনে ও চব্বিশের গণঅভ্যুত্থানে আমরা দলীয় ছাত্র রাজনীতির অবস্থান দেখেছি,” বলেন হাসনাত।
Published : 12 Dec 2024, 11:25 PM
গণআন্দোলন পরবর্তী ক্যাম্পাসে ‘ছাত্ররাজনীতির’ পক্ষে বললেও দলীয় ছাত্ররাজনীতি চান না বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের আহ্বায়ক হাসনাত আব্দুল্লাহ।
তিনি বলেন, “ক্যাম্পাসে অবশ্যই অবশ্যই ‘ছাত্ররাজনীতি’ থাকতে হবে। দলীয় ছাত্র রাজনীতির পক্ষে থাকা নেতাদের যুক্তি- দলীয় ছাত্র রাজনীতি না থাকলে না কি নেতা গড়ে উঠবে না। আটচল্লিশ, বায়ান্ন, একাত্তর, নব্বই, আঠারো ও চব্বিশে আমরা দেখি- দলীয় ছাত্ররাজনীতির নেতারা জাতীয় স্বার্থের বিরুদ্ধে দাঁড়িয়েছে।”
বৃহস্পতিবার সন্ধ্যায় ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের স্বোপার্জিত স্বাধীনতা চত্বরে এক আলোচনা সভায় একথা বলেন হাসনাত আব্দুল্লাহ।
১৯৪৮ সাল থেকে ১৯৫২’র ছাত্র আন্দোলন নিয়ে তিনি বলেন, “সেসময় আওয়ামী লীগের কেউ ১৪৪ ধারা ভাঙেনি। একাত্তরে আওয়ামী লীগের ভূমিকা নিয়ে প্রশ্ন রয়েছে এখনও।
“আঠারোতে ছাত্রলীগের ভূমিকা দেখেছি। নিরাপদ সড়ক আন্দোলনে, কোটা সংস্কার আন্দোলনে ও চব্বিশের গণঅভ্যুত্থানে আমরা দলীয় ছাত্ররাজনীতির অবস্থান দেখেছি। দলীয় ছাত্ররাজনীতির ব্যানারে সবসময়ই তারা সাধারণ শিক্ষার্থীদের বিরুদ্ধে দাঁড়িয়েছে।”
‘গণঅভ্যুত্থান পরবর্তী ছাত্ররাজনীতি প্রশ্ন: নয়া স্বরূপ অনুসন্ধানের অভিপ্রায়’ শীর্ষক এ আলোচনা সভা করে ‘ডায়ালগ ফর ডেমোক্রেসি’ নামের একটি প্ল্যাটফর্ম।
সেখানে সরকার পতনে নেতৃত্ব দেওয়া বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলন ছাড়াও নাগরিক কমিটি, ইসলামী ছাত্রশিবির ও ছাত্র ইউনিয়নের নেতারা ছাত্ররাজনীতি নিয়ে নিজেদের অবস্থান তুলে ধরে বক্তব্য দেন।
আলোচনায় তারা নিয়মিত ডাকসু নির্বাচন, ডাকসুর গঠনতন্ত্র সংশোধন, ছাত্র নেতাদের বয়সসীমা নির্ধারণসহ বেশকিছু বিষয়ে কথা বলেন।
এর আগে মঙ্গলবার ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় ক্যাম্পাসে ছাত্ররাজনীতি নিয়ে মতবিনিময় সভার আয়োজন করে ‘ক্যাম্পাসে ছাত্ররাজনীতির প্রকৃতি ও ধরন’ বিষয়ক কমিটি। ক্যাম্পাসে ছাত্ররাজনীতি থাকলে তা কেমন হবে, ডাকসু নির্বাচনসহ বেশ কিছু বিষয় নিয়ে আলোচনা হয় সেখানে।
তবে ওই মতবিনিময় সভায় ইসলামী ছাত্রশিবিরের প্রতিনিধিরা উপস্থিত থাকায় সভা ছেড়ে বেরিয়ে যায় বিপ্লবী ছাত্র মৈত্রী, সমাজতান্ত্রিক ছাত্র ফ্রন্ট (মার্ক্সবাদী) ও সমাজতান্ত্রিক ছাত্র ফ্রন্ট (বাসদ) নেতারা।
বৃহস্পতিবার ‘ডায়ালগ ফর ডেমোক্রেসি’র আলোচনায় ডাকসুর সাবেক সমাজসেবা বিষয়ক সম্পাদক ও জাতীয় নাগরিক কমিটির সদস্য সচিব আখতার হোসেন বলেন, ছাত্ররাজনীতির যে খারাপ দিকগুলো আছে, যার কারণে শিক্ষার্থীরা সবসময় নির্যাতিত নিপীড়িত হয়েছে, সে জায়গায় যদি কারও দায় থাকে, তার সব থেকে বড় দায় প্রশাসনের।
নিজের অভিজ্ঞতা তুলে ধরে তিনি বলেন, ছাত্রলীগের বিরুদ্ধে প্রশাসনের কাছে অভিযোগ করেও লাভ হয়নি। প্রশাসন কখনই ওই সংগঠনের কোনো নেতাকে ডেকে নিয়ে শাস্তি দেওয়া দূরের কথা, এমনকি সতর্ক পর্যন্ত করেনি।
নিয়মিত ডাকসু নির্বাচন করার ওপর গুরুত্ব দিয়ে তিনি বলেন, ২০১৯ সালের ডাকসু নির্বাচন হয়েছে ২৮ বছর পর। এবার পাঁচ বছর শেষ হতে গেলেও
আরেকটি নির্বাচন হচ্ছে না। নিয়মিত ডাকসু নির্বাচন না হলে পরিবর্তনগুলো টেকসই হবে না।
তিনি ছাত্ররাজনীতির বয়সসীমা নির্ধারণ করে দেওয়ার ওপর তাগিদ দেন।
আলোচনায় ছাত্রশিবির সেক্রেটারি জেনারেল জাহিদুল ইসলাম নারী শিক্ষার্থীদের জন্য ‘আলাদা প্ল্যাটফর্মের’ কথা বলেন।
বিশ্ববিদ্যালয়ে কমিটি হলে ১০০ জন ছাত্রী এবং সমান সংখ্যক ছাত্র রাখার পরামর্শ দেন তিনি।
সভায় ডাকসুর গঠনতন্ত্রে সভাপতির ‘একনায়কতান্ত্রিক ক্ষমতা‘ বিলুপ্তির দাবি করেছেন ছাত্র ইউনিয়নের সহ-সাধারণ সম্পাদক মেঘমল্লার বসু।
তিনি বলেন, ছাত্র সংসদের প্রধান (সভাপতি) কোনোভাবেই একজন অছাত্র বা শিক্ষক হতে পারে না।
আলোচনায় ডায়ালগ ফর ডেমোক্রেসির উপদেষ্টা এম এ এস ওয়াজেদ, আহ্বায়ক শেখ মো. আরমান, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় সাংবাদিক সমিতির সভাপতি মুজাহিদুল ইসলাম মাহি, ঢাকা ইউনিভার্সিটি ডিবেটিং সোসাইটির সাধারণ সম্পাদক আদনান মোস্তারি উপস্থিত ছিলেন।